করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই চাকরির বাজারে চলছে মন্দা। এই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি চাকরির নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা গ্রহণ হচ্ছে না বললেই চলে। বিশেষ করে, সরকারি চাকরির বেশ কয়েকটি পদের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেসব স্থগিত করেছে নিজ নিজ নিয়োগ কর্তৃপক্ষ।
হিসাব করে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রায় ৬০ হাজার ২২৮টি পদের নিয়োগ আটকে আছে। এ নিয়ে চরম হতাশায় আছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের অধিকাংশই বেকারত্বের বোঝা টানতে টানতে এখন ক্লান্ত।
চার বিসিএস আটকে
৪০তম বিসিএস: ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত ২৭ জানুয়ারি। এই বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি। এ বিসিএসে শূন্য পদ ছিল ১ হাজার ৯০৩।
৪১তম বিসিএস: চলতি বছরের ১৯ মার্চ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একযোগে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখনও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। এই বিসিএসে পদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৬৬টি।
৪২তম বিসিএস: স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন নিয়োগের জন্য ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা আটকে আছে করোনার কারণে। ৬ জুন থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলেও স্থগিত করা হয় ২৭ জুন থেকে। বিশেষ এই বিসিএসে পদের সংখ্যা ২ হাজার।
৪৩তম বিসিএস: ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ৩০ নভেম্বর। এই বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা। ইতোমধ্যে এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে পিএসসি। এক দফা পিছিয়ে প্রিলির তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ২৯ অক্টোবর।
আটকে থাকা বিসিএসগুলো নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নূর আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তিনটি বিসিএসের কার্যক্রম আটকে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যত দ্রুত সম্ভব এ বিসিএসগুলোর কার্যক্রম শেষ করা হবে। আর অফিস খুললেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল দেয়া হবে।
নন-ক্যাডারে নিয়োগ
সিনিয়র স্টাফ নার্স: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ জানুয়ারি। এতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৮ জন। এরপর গত ১১ জুন উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এখনও লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র স্টাফ নার্সে পদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫০০। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আড়াই হাজার নয়, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে পিএসসিতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে ৮ হাজার ৫৩৪ জনের জন্য।
এ ছাড়া, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৫৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত ২ মে। এ পদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২৬ জুন ও ৩ জুলাই। কিন্তু গত ২৩ মে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসি।
এর বাইরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতটি সিনিয়র টেকনিশিয়ান পদের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ৮ জুলাই। কিন্তু গত ২৩ জুন এই পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসি।
এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তোষাখানা ইউনিটের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদের সাঁটলিপি ও কম্পিউটার মুদ্রাক্ষর গতি পরীক্ষা এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বস্ত্র অধিদপ্তরের ফোরম্যান নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষাও স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন ক্যাডার) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা হচ্ছে। আর বেশ কয়েকটি মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই স্থগিত পরীক্ষাগুলোর নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।
অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহকারী পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় গত ১ জানুয়ারি। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ৯৯০ জন নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ২০ অক্টোবর। বিজ্ঞপ্তিতে ৩২ হাজার ৫৭৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছু আটকে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে পরীক্ষা নেয়ার জন্য বেশ কিছু কাজ শেষ করে রেখেছি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রদর্শক, গবেষণা সহকারীসহ মোট ৪ হাজার ৩২টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ বিজ্ঞপ্তি থেকে চারটি পদের (বুক স্টার ৪৬টি পদ, নিরাপত্তা প্রহরী ২৫৫, মালী ১০০, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১৬৩) পরীক্ষা এ বছরের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। এখনও ৩ হাজার ৪৬৮টি পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পর্যায়ক্রমে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।
খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ১১ জুলাই। বিজ্ঞপ্তিতে উপ-খাদ্য পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পদে মোট ১ হাজার ১৬৬ জন নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে ১৩১টি পদের পরীক্ষা নেয়া হয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাকি ১০ পদের ১ হাজার ৩৫টি নিয়োগের পরীক্ষা এখনও নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ১ হাজার ৩৫টি পদের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
সিলেট গ্যাসফিল্ডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ২৪ আগস্ট। বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে মোট ১০৪ জন নিয়োগের কথা উল্লেখ রয়েছে।
পেট্রোবাংলায় বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ১৬ মে। বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী ব্যবস্থাপকসহ মোট ১১৫টি পদের কথা উল্লেখ রয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ২২ পদে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
কম্পটোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের অডিটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ। বিজ্ঞপ্তিতে অডিটরসহ মোট ৩২৩টি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। এ বছরের ২৬ জুন এ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার সব কার্যক্রম শেষ করলেও পরবর্তী সময়ে করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অডিটর, জুনিয়র অডিটরসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ৫ এপ্রিল। বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন পদে মোট ১ হাজার ৯০১টি পদের কথা উল্লেখ রয়েছে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ৩ মে। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ৩১৭ পদে লোক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষকসহ ১২টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১ হাজার ১৯৪টি পদে লোক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশন গত ১৯ জানুয়ারি সহকারী জজ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১০০টি পদের কথা উল্লেখ করা হয়।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ গত ২১ মে কয়েকটি পদে ১০টি গ্রুপে মোট ১ হাজার ৬০৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি করা হয়। বরাবরের মতো এবারও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাধিক গ্রুপ আছে। গ্রুপ অনুসারে আলাদা পরীক্ষা হবে।
এসব পরীক্ষার সবগুলোর ক্ষেত্রেই বলা হচ্ছে, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই শুরু হবে নিয়োগ কার্যক্রম।
চাকরিপ্রত্যাশীরা হতাশ
নিয়োগ পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চরম হতাশ চাকরিপ্রত্যাশীরা। তেমনই একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের ছাত্র মো. আবিরুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার পরও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটছে। এভাবে আর কত দিন চলবে কে জানে? পরিবারের সবাই আশা করে আছে খুব শিগগির সরকারি চাকরি হবে। কিন্তু করোনার কারণে এখন তো পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের রাশেদুল ইসলামও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পরই চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি; তবে করোনার কারণে এখন কোনো নিয়োগের পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এভাবে কত দিন চলবে সেটি নিয়ে চিন্তায় আছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে পাস করেছেন নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্টাও করিনি। কিন্তু এখন বয়সও শেষ পর্যায়ে। করোনার কারণে বেশ কয়েকটি বড় নিয়োগের পরীক্ষা আটকে আছে। এভাবে আর কত দিন চলবে কে জানে?’
সরকারি চাকরিতে কত পদ খালি
প্রশাসনের ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি পদের মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি পদ শূন্য। জনপ্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস অফ সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস-২০২০ বই থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বইতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোতে মোট ১৭ হাজার ৭৩৯টি পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৫ হাজার ৬৮টি পদ।
সরকারি বিভিন্ন বিভাগে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৬২৬টি পদের অনুকূলে ফাঁকা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৬টি পদ।
এ ছাড়া আঞ্চলিক ও ডিসি অফিসগুলোতে মোট ৪৭ হাজার ৩৩টি পদের অনুকূলে ফাঁকা রয়েছে ১৪ হাজার ৮৫১টি পদ। এই হিসাবের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় ও এসি ল্যান্ড কার্যালয়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনগুলোতে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৭০টি পদের বিপরীতে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭০০টি পদই এখন ফাঁকা।
এসব ফাঁকা পদের মধ্যে ৪৬ হাজার ৬০৩টি প্রথম শ্রেণির, যা মোট ফাঁকা পদের ১২ শতাংশ। মোট ফাঁকা পদের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৯ হাজার ২৮টি দ্বিতীয় শ্রেণির। ৫২ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯০২টি তৃতীয় শ্রেণির এবং ২৬ শতাংশ অর্থাৎ ৯৯ হাজার ৪২২টি চতুর্থ শ্রেণির পদ রয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন থেকে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসনে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট তাদের প্রতিবেদন পেশ করার পর তিনি এই নির্দেশ প্রদান করেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।’
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এখনি মনোযোগী হতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারের সংকট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকলেও যেখানে দরকার সেখানে ডাক্তার নেই। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’
চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে।’
কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ডা. সায়েবা আক্তার, সাবেক সচিব এম এম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উমায়ের আফিফ।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন ডা: নায়লা জামান খান, ডা: মোজাহেরুল হক।
চট্টগ্রামে আলোচিত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় ইসকনের সাবেক সংগঠক ও বর্তমানে কারাবন্দি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতের বিচারক এস এম আলাউদ্দীন এই আদেশ দেন। শুনানিকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিরাপত্তা জনিত কারণে আদালতে হাজির না করে কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত করা হয়।
একইসঙ্গে আরো তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। পুলিশের ওপর আক্রমণ, কর্তব্যকাজে বাধা, আদালত প্রাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি, হামলার অভিযোগের বাকি তিনটি মামলার শুনানি ভার্চুয়ালি আগামীকাল মঙ্গলবার হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এরআগে, গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যাসহ চারটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মামলা আজকে ভার্চুয়াল শুনানি হয়। অন্য তিনটি মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোট নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি করে চিন্ময়ের অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় আটকে রাখে তারা। একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আলিফ হত্যা মামলায় ২১ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার তিন আসামি-চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা আইনজীবী সাইফুলকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেন।
চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে আরো একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও রয়েছে, যা গত বছরের ৩১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পতাকা অবমাননা করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন চিন্ময় ও তার অনুসারীরা। ওই মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার করা হয় তাকে।
এর মধ্যে, গত ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে জামিনের বিরুদ্ধে আপীল করেছে।
সারাদেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ০৫ মে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
ফেনীতেও বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখার সদস্যগণ দুই দফা দাবিতে আদালতে আঙ্গিনায় সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছেন ।
বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রীম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করণ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদানসহ বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করা এবং বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি পালন করেছেন।
সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯ টায় ফেনীতে আদালতের নিচ তলায় আয়োজিত দুই ঘণ্টাব্যাপি কর্মবিরতিতে সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের সিনিয়র স্ট্রোনোগ্রাফার ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মহসিন।
বেঞ্চ সহকারি মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম জেলা জজ প্রথম কোর্টের সেরেসতাদার ও অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলতাফ হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ ফেনী এর নাজির শাহনাজ বেগম,
স্টোনোগ্রাফার মো: দিদারুল ইসলাম, রেকর্ড কিপার সামছুল কিবরিয়া, স্টোনোগ্রাফার মো: শামছু উদ্দীন,
বেঞ্চ সহকারী আশিকুর রহমান ভূঁইয়া, তুলনা সরকারি মোঃ ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, ইসমাইল ভূঁইয়া, আনোয়ারুল আজিম, ইউনুস শরীফ, মোঃ: জহির উদ্দিন মজুমদার, হারিস মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখা কর্মকর্তারা জানায়, এসব দাবী উপস্থাপন করে গত ০৪ মে তারিখের মধ্যে উক্ত দাবী বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা সত্বেও এসোসিয়েশনের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে এই কর্মবিরতি পালন করছেন।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ফেনী শাখার কর্মকর্তারা আরো বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র মাননীয় বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীগণকে উক্ত পে-স্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়নি। মাননীয় বিচারকগণের সাথে আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণ একই দপ্তরে কাজ করা সত্বেও জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে মাননীয় বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও সহায়ক কর্মচারীগণ জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। মাননীয় বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, ডিসেম্বর মাসে দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন (ডিসেম্বর মাস) দায়িত্ব ভাতা'সহ ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয়না। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাননীয় বিচারকগণের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মচারীগণকে।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংস্কারমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, ‘নির্বাচন কবে হবে—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই কোনো নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন আয়োজনের।’
সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত। আমরা এই রাজনৈতিক রূপান্তরকে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে অগ্রগতি হিসেবে দেখি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে মতামত নেই।‘
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুনও বক্তব্য রাখেন।
মিলার বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুস্পষ্ট ও অগ্রাধিকারভিত্তিক সংস্কার তালিকায় একমত হবে। আমাদের কাছে সেই অভিজ্ঞতা আছে, আর্থিক সহায়তা আছে, এবং আছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি বলেছেন, ‘মানুষ এখনো মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই সঠিক উত্তর। তবে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম নির্বাচন আয়োজন করতেই হবে।’
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘এই সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত যেন তারা প্রতিশ্রুত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
জুলাই-আগস্টের সহিংসতা প্রসঙ্গে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের কাজকে আমরা সমর্থন করি। এসব ভয়াবহ অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার যেন যথাযথভাবে প্রক্রিয়ায় সুরক্ষিত হয় - সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
নারীর অধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘পুরুষ ও নারীর সমতা ইউরোপের মৌলিক মূল্যবোধ। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা উচিত। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো এই সুপারিশগুলো বাস্তবে রূপ দিক।’
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে এখনো সহিংসতা চলছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকট।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছি—রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া অবশ্যই নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছামূলক হতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ২০২৫ সালে ৩২ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলো মিলে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন আন্তঃজেলা ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৫ মে) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
আটক হওয়া ডাকাতদের কাছে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, পুলিশি পোশাক, ওয়াকিটকি, ইয়াবা ট্যাবলেট ও ডাকাতির অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন—রুবেল রানা (২৯), আজিজুর মন্ডল (৩৬), শিলন মোল্লা (২১), সবুজ আলী মিঠু (৩০), মনিরুল ইসলাম (৪০) ও মারুফ শেখ (২০)। তারা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে খাসকররা যাওয়ার পাকা সড়কে একটি ডিজেলের দোকানের সামনে মাইক্রোবাসে একদল অস্ত্রধারী ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মাইক্রোবাসটি ঘিরে ফেলে এবং তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ২টি তালা কাটার যন্ত্র, ৫টি মাস্টার চাবি, ১টি পুলিশের জ্যাকেট, ১টি ওয়াকিটকি সদৃশ্য মোবাইল সেট, ৫০ পিস ইয়াবা, ১টি মোবাইল ফোন ও ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৩০৯৭ নম্বরের একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান। ঘটনার পর আলমডাঙ্গা থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদক আইনে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশের সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এবং এটি সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
একইসঙ্গে, স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এই কমিশন। সোমবার (৫ মে) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন, সেখানে চিকিৎসক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ এবং অন্যান্য ওষুধ সুলভ মূল্যে সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নিম্নমানের চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান সূচনা বক্তব্য রাখেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, অধ্যাপক ডা. সায়েরা আখতার, এম এম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান ও ওমাইর আফিফ।
এর আগে সোমবার সকাল ১১টায় কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পেশ করা হয়।
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
মন্তব্য